চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালী বাজার। বিজয় দিবসকে ঘিরে সরগরম এ বাজার। দাম কম হলেও ফুলের উৎপাদনে খুশি কৃষকরা। গত তিনদিনে এ বাজারে অন্তত দেড় কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে প্রায় ছয় হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। তারা অন্তত এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে ফুল চাষ হয়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেন্ডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। ডিসেম্বরে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস থেকে শুরু ফেব্রুয়ারিতে বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস এবং মার্চে স্বাধীনতা দিবস ও পরে পহেলা বৈশাখ দিয়ে গোটা মৌসুম জুড়ে ফুল বিক্রি হয়।
ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, গত তিনদিনে গদখালিতে ফুলের রমরমা অবস্থা বিরাজ করছে। বুধবার সবচেয়ে বেশি ফুল দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। ১৬ ডিসেম্বরের বাজার ধরে ১৪ ডিসেম্বরে ব্যবসায়ীরা ফুল নিয়ে গেছেন জেলায় জেলায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার ধরতে শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে চাষিরা ফুল নিয়ে এসেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারাও আসছেন এখানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণা আর হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা।
গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষা করছেন শত শত ফুলচাষি। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দাম নিয়ে হাক-ডাকে ব্যস্ত।
বাজারে ১০০ পিস গোলাপ ২০০-৪০০ টাকা; গ্লাডিওলাস রং ও রকমভেদে প্রতি পিস ৫-১৫ টাকা; প্রতি ১০০ পিস রজনীগন্ধা ৩৫০-৫০০ টাকা; জারবেরা প্রতিপিস ৮-১২ টাকা; প্রতিহাজার গাঁদা ফুল ২৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অথচ বিগত ফেব্রুয়ারিতে প্রতি পিস গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১৫-২০ টাকায়। এছাড়া রজনীগন্ধা স্টিক বিক্রি হয়েছে ৯-১০ টাকা, গ্লাডিওলাস ৮-১২ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে প্রতিহাজার ৬০০-৭০০ টাকা।
ঝিকরগাছার সৈয়দপাড়া এলাকার মিজানুর রহমান জানান, বিজয় দিবসকে ঘিরে ফুলের বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। গতবারের তুলনায় দাম কিছুটা কম হলেও বেচাকেনা ভাল হচ্ছে। এ বাজার ধরে রাখা গেলে বিগত করোনাকালের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন ফুল চাষিরা।
ফুল ব্যবসায়ী টায়রা গ্রামের আব্দুল মোতালেব জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের চাষ ও উৎপাদন ভাল হয়েছে। গদখালি বাজারও সরগরম হয়ে উঠেছে। ভাল বেচাকেনা হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতিতে ফুল চাষিরা খুশি।
পটুয়াপাড়া গ্রামের প্রশান্ত কুমার শীল শান্ত জানান, দামে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও কৃষকের লাভের পরিমাণ কম। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণেও ফুলের দামের ওপর প্রভাব পড়েছে।
সৈয়দপাড়া গ্রামের আশাবুর রহমান জানান, মৌসুমের শুরুতে বাজার চাঙ্গা হয়েছে। যদিও দাম কিছুটা কম। তবে ভরা মৌসুমে বাজার আরও ভাল হবে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি একাংশের সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, করোনাকালের দুই বছরে ফুল সেক্টরের ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় চাষিরা আবার মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছেন।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, ঝিকরগাছার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়ে থাকে। এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবং যথাসময়ে শীত পড়ায় ফুলের উৎপাদন ভাল হয়েছে। পাশাপাশি পোকার আক্রমণও অনেক কম। এ কারণে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।